Header Ads

Header ADS

মানুষ কেন ঘুমায়?

মানুষ কেন ঘুমায়?

ঘুম প্রায় সকল মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। সাইকোলজির ভাষায় ঘুমকে বলা হয় মস্তিষ্কের খাদ্য।আজকে আমি এই ঘুম নিয়ে কিছু আলোচনা করব।

মানুষের শরীরকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

দেহ

মন
মস্তিষ্ক 

মানুষের মন কিন্তু অনেক জটিল জিনিস।যাই হোক এই সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করব। ঘুমের মধ্যে মনের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।

মানুষ ঘুমায় বা বিশ্রাম নেয় দুটি কারণে। দেহ ক্লান্ত হলে বা মস্তিষ্ক ক্লান্ত হলে। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এখানে একটু ভিন্নতা আছে। অনেকেই মনে করেন যে যখন মানুষের শরীর ক্লান্ত হয়ে আসে এবং আর কাজ করার ক্ষমতা থাকে না তখনি মানুষ ঘুমায়। হ্যা, এই কথাটাকে আমিও সমর্থন করি। কিন্তু কথাটায় ৭৫% ভুল আছে।

যদি কেউ দাবি করেন যে এই কথাটা ১০০% ঠিক তাহলে তার কাছে আমার প্রশ্ন,“প্যারালাইজড মানুষরা কী সারাদিন ঘুমায়?” আর এটার জলন্ত উদাহরণ হলো স্যার স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। এই মহান বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছিল মোটর নিউরন ডিজিজ নিয়ে।এই রোগটির বিশেষত্ব হলো এটি আক্রান্ত ব্যক্তির সকল মাসেলস নিউরন আস্তে আস্তে নিস্ক্রিয় করে ফেলে। এই রোগের ক্ষতিকর এফেক্ট থেকে মুক্তি পান নি এই মহান বিজ্ঞানী। কিন্তু তার প্রবল মস্তিষ্কের বিকাশ বন্ধ থাকে নি। এটাই নিউরোলজির নিয়ম। শরীরের এক অংশের নিউরন যখন নিস্ক্রিয় হয়ে যায় তখন অন্যান্য অংশের নিউরন গুলো প্রবল ভাবে সক্রিয় হয়ে যায়। আর এই প্রবল মস্তিষ্কের প্রয়োগ করেই তিনি এমন একটি কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন যা দিয়ে তিনি মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এবং তার শিষ্যরা কম্পিউটারের মাধ্যমে তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে প্রকাশ করেণ তার যুগান্তকারী আবিষ্কার কৃষ্ণ গহ্বরের রহস্য।

আবার এটাও হয়তো অনেকে লক্ষ্য করেছেন যে, আপনি আজ সকাল থেকে অনেক শারীরিক পরিশ্রম করেছেন আর এখন আপনার সম্পুর্ণ শরীর ক্লান্ত আপনি ঘুমাতে চেষ্ঠা করছেন কিন্তু আপনার ঘুম আসছে না। আর তখন যদি আপনার শরীরের কোনো অংশে ব্যাথা করে, ও আল্লাহ মরার উপর খাড়ার ঘা পড়ার মতো অবস্থা হয়। এটা তখনি হয় যখন আপনি কোনোরকম মানসিক পরিশ্রম না করে কেবল শারীরিক পরিশ্রম করেন। এক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম করার কারনে আপনার শরীর ক্লান্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু মানসিক পরিশ্রম না করার কারনে আপনার মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয় না। আর যতক্ষন মস্তিষ্ক না পর্যন্ত আপানার মস্তিষ্ক ক্লান্ত হচ্ছে ততক্ষন ঘুম বাবাজি আপনার চোখে ধরা দিবে না ।

এখন অনেকেই বলতে পারেন যে,“রাতে কী শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এবং অন্যান্য যারা অফিসিয়াল চাকুরিজীবি আছেন তারাই ভালো ঘুমান? দিন মজুরেরা কী নির্ঘুম রাত কাটান?” আমি তাদের বলছি,“আমাদের পুরো শরীরের ম্যানেজার হলো আমাদের মস্তিষ্ক। অর্থাৎ, আপনি যে শারীরিক পরিশ্রম করবেন সে কাজটি যথাযথ ভাবে করার জন্য আপনার শরীরের অঙ্গ গুলোকে সঠিক ভাবে নড়াচড়া করতে হবে। আর এই কাজটা করে আপনার মস্তিষ্ক। এক্ষেত্রে আপনার মস্তিষ্ক ও আপনার শরীর উভয়েরই ব্যবহার হয়। আর তাই শারীরিক পরিশ্রম করলে ঘুম ভালো হয়।তবে আরো ভালো হয় যদি দীর্ঘদিন একই ধরনের কাজ না করে ভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। কারন একটা দীর্ঘদিন একই কাজ করার কারনে সেই কাজটা করার জন্য কোন কোন অঙ্গ কীভাবে ব্যবহার করতে সেটা পুরোপুরি রপ্ত করে ফেলে।ফলে তখন কাজটা করতে মস্তিষ্কের আর তেমন বেশি কাটাকাটুনি করতে হয় না।ফলে মস্তিষ্কও আর তেমন বেশি ক্লান্ত হয় না।

আর যারা অফিসিয়াল চাকুরিজীবি তাদের মস্তিষ্কের উপর অনেক চাপ পরে তাই মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পরে। তখন তাদের শরীরও অনেকটাই ক্লান্ত হয়। কারণ মানুষের শরীরটাও একটা ইঞ্জিনের মতো। একটা ইঞ্জিনকে যদি ব্যাবহার না করে ফেলে রাখা হয় তাহলে সেটাতে খুব দ্রুত মরিচা পড়ে এবং ঠিক মতো কাজ করে না।তাই যারা অফিসিয়াল চাকুরিজীবি তাদেরও ঘুমটা ভালোই হয়।এছাড়াও মস্তিষ্কের সাথে শরীরের একটা সম্পর্ক হলো শরীর পরিচালনার জন্য মস্তিষ্কের উপর নির্ভরশীল। আর মস্তিষ্ক যদি নিজেই ক্লান্ত হয়ে যায় তাহলে তো সেটা আর শরীরকে ঠিক মতো পরিচালনা করতে পারবে না।এজন্যেও মনে হয় যে শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। আর তখনি ঘুম আসে।

আবার অনেক সময় অফিসিয়াল চাকুরিজীবিদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। কারন তারা দিনের বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটার, মোবাইল, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার করে। আর বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত যে অতিরিক্ত কম্পিউটার, মোবাইল, টিভি ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের নিউরন গুলোতে প্রচুর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার পর মস্তিষ্ক শান্ত হতে অনেক সময় নেয়। ফলে তাদের ঘুম আসতে দেরি হয়।অর্থাৎ, শরীর ক্লান্ত হলেই নয়, আসলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হলেই মানুষ ঘুমায়।

ঘুম হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের জন্য একটা রিলিফ সোর্স। শরীর এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো উচিত। আবার অতিরিক্ত ঘুম ও কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ক্ষতিকর।আমাদের একটা কথা মাথায় রাখা উচিত যে এইবেলা যত বেশি খাবো তার পরের বেলা তার চাইতে বেশি না খেয়ে থাকতে হবে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে,

‘More than 6 who is lazy,

Less than 6 who is crazy.’

অর্থাৎ, ৬ ঘন্টার চেয়ে অতিরিক্ত বেশি না, আবার ৬ ঘন্টার চেয়ে অতিরিক্ত কমও না।

আজকের আলোচনা এইটুকুই। আমার বর্ণনা কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। আর এরকমই আরো অন্যান্য বিষয়ে বর্ণনা পেতে আমার ব্লগকে ফলো করবেন। আর আপনারা যদি চান যে আপনাদের কোনো পছন্দের বিষয় সম্পর্কে আমার ব্লগে বর্ণনা করি তাহলে সেটা কমেন্টবক্সে জানান। আমি আমার সেরা টা দেওয়ার চেষ্ঠা করব।

ধন্যবাদ,

ইমন দাশ





1 comment:

Powered by Blogger.