Header Ads

Header ADS

মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের গঠন। মস্তিষ্কের কাজ। মস্তিষ্কের ক্ষমতা।

মস্তিষ্ক

সকলেই জানেন যে মস্তিষ্ক হলো মানব শরীরের ম্যানেজার। আর এই মস্তিষ্কের রয়েছে নিজস্ব একটি ধারণক্ষমতা। সাইকোলজির মতে শিশুর জন্মের ২১ দিন পর থেকে তার মস্তিষ্ক পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করতে শুরু করে। অর্থাৎ তখন থেকেই একজন মানুষ যা কিছু দেখে, যা কিছু পড়ে, যা কিছু শুনে, যা কিছু শিখে সব সেভ হয় তার মস্তিষ্কে। জন্মের ২১ দিন পর থেকে শুরু করে মানুষের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই ডাটা সেভ করার কার্যক্রম চলতে থাকে। তো মানুষের জীবন দীর্ঘ একটি সময়। এই সময়ে অনেক কিছুই হয়ে থাকে একজন মানুষের সাথে। তো এতো তথ্য জমা রাখে যে মস্তিষ্ক তার প্রকৃত ধারণ ক্ষমতা কতটুকু তাও আমাদের জেনে রাখা উচিত। সাইকোলজির

মতে, মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা 2.5পিবি(পেরাবাইট)। ১পিবি=১০২৪টিবি(টেরাবাইট) এবং ১টিবি=১০২৪জিবি(গিগাবাইট) । বর্তমান ডিজিটাল কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক যদি ১টিবি ধরা হয় তাহলে একজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ২৫৬০টি কম্পিউটারের সমান। অর্থাৎ ২৫৬০টি কম্পিউটারের সমান তথ্য ধারণ করতে পারেন আপনিও। এখন আপনি আপনার মস্তিষ্কে কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবেন সেটা সম্পুর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্বের প্রায় মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ২৫% অংশই ব্যবহার করে। এখন এর প্রেক্ষিতে একটি প্রশ্ন উঠে আসে যে, মানুষ যদি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ২৫% অংশই ব্যবহার করে তাহলে কিছু মানুষের স্মরন শক্তি বেশি দুর্বল হয় কেন?

এর উত্তরটা খুবই সিম্পল। স্যার স্টিফেন উইলিয়াম হকিংসের মতে মানুষের মস্তিষ্কটাও জাস্ট একটা মেমোরি কার্ড। এবং এটিও সাধারণ মেমোরি কার্ডের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় (অর্থাৎ এক শরীর থেকে অন্য শরীরে) স্থানান্তর করা যেতে পারে। এবং এর একটি দ্বার তিনি স্বয়ং উম্মোচন করেছিলেন, এমন একটি কম্পিউটার আবিষ্কার করে যার মাধ্যমে তিনি সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হওয়া সত্ত্বেও তার মস্তিষ্ক স্কেন করে বাহ্যিক পরিবেশের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন। এবং তার শিক্ষার্থীরা প্রকাশ করেছিল তার বিভিন্ন গবেষণাপত্র।

অর্থাৎ এটা ঠিক যে মানুষের মস্তিষ্কও একটি মেমোরির মতো। তো আপনি যদি একটা সাধারণ মেমোরি কার্ডে কিছু প্রয়োজনীয় ডাটা রেখে দীর্ঘদিন ধরে ওই মেমোরি কার্ডটা আর ব্যবহার না করেণ তাহলে কী হবে? মেমোরি কার্ডে আপনি যা কিছু ডাটা রেখেছিলেন সেগুলো জাঙ্ক ফাইলে পরিণত হবে এবং কিছু ফাইল ভাইরাসে পরিণত হতে পারে অথবা পুরো মেমোরি কার্ডে বাইরে থেকে ভাইরাস আসতে পারে। মেমোরি কার্ড সাপোর্ট নাও করতে পারে। আর পরবর্তীতে আপনি যদি জাঙ্ক ফাইল গুলো মুছে ফেলতে চান তাও পারবেন। বিপরীতে আপনি নতুন কোনো ডাটা রাখলে সেটাকেও ওই ভাইরাস গুলো মুছে ফেলবে। তো মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। আমরা তো ছোটোবেলা থেকে অনেক কার্যকরী তথ্য শিখে বড় হই। কিন্তু বড় হওয়ার পড়ে অনেকে বিগড়ে যায়। তারা এমন সব কাজ করে যেখানে মস্তিষ্কের কোনো প্রয়োগই থাকে না বা সেগুলো থেকে মস্তিষ্ক তেমন কোনো ভালো তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তাদের মস্তিষ্কেও জাঙ্ক ফাইল তৈরি হয়। এটা তো সকলেই জানে যে, ‘অলস মস্তিষ্ক হলো শয়তানের আস্তানা।’ যার কারণে তাদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়।

মানুষের স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো পড়ালেখা বা কোনো কাজ শিখা থেকে দূরে থাকা। এটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো দেশের বয়স্ক এবং বেকার জনগোষ্ঠী। কারন এরা কোনো কিছু শেখার ধারে কাছে নেই। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা, কারন বৃদ্ধ বয়সে তাদের কাছে করার জন্য এমন কোনো কাজই থাকে না যেখানে মস্তিষ্কের প্রয়োগ করতে হয়।

আপনি চাকরি করেন তাও আপনার স্মৃতিশক্তি দূর্বল হতে পারে। কারন আপনি প্রতিদিন নতুন কিছু শিখছেন না। আপনি যেগুলো শিখেছেন সেগুলোই প্রতিদিন ব্যবহার করছেন। তবে এমন কিছুও চাকরি আছে যেখানে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে হয়। যেমনঃ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফার্মাসিটিক্যাল অফিসার, শিক্ষক ইত্যাদি।

আর যারা এগুলো ছাড়া যারা অন্যান্য চাকুরিজীবি আছেন তাদের জন্য স্মৃতিশক্তি সবল রাখার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নিয়মিত বই পড়া। এজন্য আপনি যে কোনো ধরনের বই পড়তে পারেন। আপনি যায় করেন না কেন পড়ালেখার সাথে থাকুন, কিছু শিখুন। মানুষের জ্ঞান অর্জন কখনো শেষ হবে না। তাই আল হাদিস-এ বলা হয়েছে, মানুষের জন্মের পর থেকে কবরের দোলনা পর্যন্ত জ্ঞান অর্জনে রত থাকা উচিত। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে অনেক বড় একটি উপহার দিয়েছেন আর সেটা ব্যবহার করার উপদেশ ও পথ উভয়েই দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেটা ব্যবহার করার দায়িত্ব আপনার। সুতরাং, সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এতোবড় উপহারটাকে নষ্ট করবেন না।

মানুষের মস্তিষ্কের রয়েছে তিনটি অংশ। অগ্রমস্তিষ্ক, মধ্যমস্তিষ্ক এবং পশ্চাৎমস্তিষ্ক।

এই তিনটি অংশে বিভক্ত রয়েছে প্রায় ১০বিলিয়ন নিউরন। মস্তিষ্কের একেক অংশের একেক গুচ্ছ নিউরন শরীরের ভিন্ন ভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রন করে।

অগ্রমস্তিষ্কঃ মস্তিষ্কদ্বয়ের মধ্যে অগ্রমস্তিষ্ক হলো সবচেয়ে বড় অংশ। এর দুটি ভাগ রয়েছে ডানভাগ ও বামভাগ। এর ডানভাগ শরীরের বাম অংশ নিয়ন্ত্রন করে আর বামভাগ শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রন করে। সামগ্রিকভাবে অগ্রমস্তিষ্ক শরীরের চিন্তা চেতনা, জ্ঞান, স্মৃতি, ইচ্ছা, বাকশক্তি, ও ঐচ্ছিক পেশির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রন করে। কোন উদ্দীপনায় কী সাড়া দিবে, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

মধ্যমস্তিষ্কঃ এটি অগ্র ও পশ্চাৎ মস্তিষ্ককে সংযুক্ত রাখে। পেশির কাজের সমন্বয় সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করা এবং দর্শন ও শ্রবণশক্তিকে নিয়ন্ত্রন করে।

পশ্চাৎমস্তিষ্কঃ পশ্চাৎমস্তিষ্কের রয়েছে তিনটি অংশ। সেরিবেলাম, পনস ও মেডুলা অবলংগাটা। সেরিবেলাম দেহের পেশির টান নিয়ন্ত্রন, চলনে সমন্বয় সাধন, দেহের ভারসাম্য রক্ষা, দৌড়ানো এবং লাফানোর কাজে জড়িত পেশিগুলোর কার্যাবলি নিয়ন্ত্রন করে। পনস মধ্যমস্তিষ্ক ও মেডুলা অবলংগাটা এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। মেডুলা অবলংগাটা খাদ্য গলাধঃকরণ, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, গলবিল ইত্যাদির কাজ নিয়ন্ত্রন করে। তাছাড়া এই স্নায়ুগুলো শ্রবণ এবং ভারসাম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত।

আর তাই যখন যে অংশের কাজ বেশি হয় তখন সেই অংশ তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়। সে কারণে মস্তিষ্ক যখন ক্লান্ত হয় তখন মানুষ কোনো কাজ ঠিক করে করতে পারে না। শরীরের অঙ্গ গুলোও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। তখন শরীর খুব বেশি ক্লান্ত মনে হয়। আর ঘুমের দরকার হয়। সাইকোলজির মতে, ঘুম হলো মস্তিষ্কের খাদ্য।

অনেকের মাথা ব্যাথার সমস্যা থাকে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই একেক সময় মাথার একেক অংশে ব্যাথা অনুভব করেন। কিন্তু ভেবে সমাধান করতে পারেন না যে এরকম কেন হচ্ছে। এর কারণ হলো, এটাই যে আপনি কাজের মধ্যে মস্তিষ্কের যে অংশের ব্যবহার বেশি হচ্ছে সে অংশ ক্লান্ত হচ্ছে এবং সেই অংশই ব্যাথা করছে। আজ এইটুকুই।

আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। আপনি যদি চান যে আপনার কোনো প্রশ্ন বা পছন্দের বিষয় নিয়ে আমি আর্টিকেল লিখি তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। সেটা নিয়ে লেখার জন্য আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব।

ধন্যবাদ,

ইমন দাশ








No comments

Powered by Blogger.